আজকের পোস্টে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা প্রবন্ধ রচনা বা বিজ্ঞানের জয়যাত্রা প্রবন্ধ রচনা Class 10 রচনাটি তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম, যেটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাদয়মিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অনেকাংশে সহায়তা করবে। রচনাটি খুব সহজ ভাষায় তোমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এরকম প্রতিনিয়ত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Procesta – প্রচেষ্টা ভিজিট করো।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা প্রবন্ধ রচনা Class 10
বিজ্ঞানের যুক্তিবাদ আধুনিক জীবনে প্রগতির সোপান। সভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান আজ সর্বজনবিদিত। বিজ্ঞান আজ মানবসভ্যতায় এনেছে যুগান্তর। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ ছিল অরণ্যচারী ও গুহাবাসী। কিন্তু সে সময়ে মানুষকে বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মানবসভ্যতার সুরম্য ইমারত আজ প্রতিষ্ঠিত। আমাদের জীবনের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ও ভাবনার মধ্যে বিজ্ঞানচেতনাকে বিস্তার করতে হবে। বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার ও তার জয়যাত্রাকে মানব কল্যাণে নিয়োজিত করতে পারলে, সেটিই হবে সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান কাজ।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সমাজের সর্বত্র
সভ্য সমাজের যে কোন ক্ষেত্রে চোখ মেললেই দেখা যায়, সভ্যতার রন্দ্রে রন্দ্রে বিজ্ঞানের অবদান। গ্রামের মাঠের মধ্য দিয়ে পথে চলছে বাস, লরী, ট্যাক্সি, স্কুটার ইত্যাদি। পথের বিজ্ঞানের জয়যাত্রা দুপাশে বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা। বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলছে, পাখা ঘুরছে। গ্রামের মধ্যেও মিলে তৈরি হচ্ছে কাপড়, কৃষকরা ব্যবহার করছে লাঙলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, ব্যবহার করছে রাসায়নিক সার। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে গভীর অরণ্য, নির্জন সমুদ্র এবং এমন কি নিস্তত্থ হিমবাহে পর্যন্ত চলবার জো নেই। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, যানবাহন, আমোদ-প্রমোদ, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান।
যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
বিজ্ঞান আজ দূরকে করেছে নিকট। পৃথিবীকে এনে দিয়েছে ঘরের কোণে। দূরদূরান্তে আজ আমরা সহজেই পাড়ি দিতে পারি। টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবস্থার কল্যাণে দূরদূরান্তে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে ডায়াল ঘুরিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে কথা বলা যায়।
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্র
কৃষকও আজ গ্রহণ করছে বিজ্ঞানের দান। ভূমিকর্ষণ থেকে ফসল সংগ্রহ, ঝাড়াই-মাড়াই, সংরক্ষণ সবক্ষেত্রে। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে কৃষকরা বুঝে যাচ্ছেন-কোন জমিতে কি ফসল হ’তে পারে। ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে একই জমিতে তিনবার ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষির সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের দান যথেষ্ট তা যে কোন শিল্পের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
প্রযুক্তি
সভ্যতার উন্নতি ও বিকাশে কারিগরী বিজ্ঞানের অবদান যথেষ্ট। খরস্রোতা, প্রমত্তা যে নদীকে দেখে মানুষ একদিন ভয় পেত, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দৌলতে সে নদীতে আজ বাঁধ দেওয়া হচ্ছে, জলসেচের ব্যবস্থা হচ্ছে, সেতু নির্মাণ, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গা নির্মাণ, পথঘাট তৈরি, হাইওয়ে নির্মাণ, গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করে চলেছে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিবিদ্যা।
চিকিৎসা বিজ্ঞান
চিকিৎসা বিজ্ঞানে আজ এসেছে যুগান্তর। মানুষ বহু দুরারোগ্য ব্যাধিকে নির্মূল করতে পেরেছে। যেমন কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া। এমনকি ‘এইডস্’-এর মতো রোগের টিকাও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আবিষ্কৃত হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। শুধু তাই নয়, সার্জারির ক্ষেত্রে আজ এসেছে যুগান্তর। হার্টের সার্জারি করে মানুষকে জীবনদানও আজ বিজ্ঞানের দান।
মহাকাশ ও পরমাণু বিজ্ঞান
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নির্মম সত্যকে প্রকাশ করার জন্য ব্রুনোকে একদিন আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। সৌরকলঙ্কের কথা প্রকাশ করায় গ্যালিলিওকে বন্দী করা হয়েছিল, কিন্তু ওঁদের সাধনা ব্যর্থ হয়নি, মহাকাশ বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতিই তার প্রমাণ। মানুষ আজ চাঁদে পাড়ি দিচ্ছে, রকেট পাঠিয়ে মঙ্গল ও শুরু গ্রহের ছবি তুলছে। শুধু তাই নয়, পরমাণুরহস্য ভেদ করে এবং পরমাণু-ভাঙার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে মানুষ আজ অসীম ক্ষমতার অধিকারী। তবে পরমাণু বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক দিকটিও স্মরণে রাখতে হবে।
খাদ্য ও শিক্ষা
পুষ্টিবিজ্ঞান আজ আমাদের সুষম খাদ্যের তালিকা প্রস্তুত করে দিয়েছে-যা জীবনধারণের ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন। খাদ্যের পর শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের দান। বই, খাতা, চক, ডাস্টার, গ্লোব, মানচিত্র, চার্ট, কম্পিউটার প্রভৃতি শিক্ষাবিস্তারে সাহায্য করছে।
মনোরঞ্জনে বিজ্ঞান
মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য বিজ্ঞান আজ বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। রেডিও, টিভি, ভিডিও, স্টিরিও সেট মানুষকে আনন্দ দান করছে। কেবল টি.ভি-র মাধ্যমে মানুষ আজ বাড়িতে বসে চ্যানেল ঘুরিয়ে দৈনন্দিন নতুন নতুন মনোরঞ্জনকারী অনুষ্ঠান দেখতে পাচ্ছে। মানুষের একঘেয়েমি ও ক্লান্তিকর জীবনে বিজ্ঞান এনে দিচ্ছে বৈচিত্র্য।
শান্তির কাজে বিজ্ঞান
বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদানের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র যে দৈহিক শান্তিলাভ করা যায়, তা নয়, বরং মানুষ আজ মানসিক দিক দিয়েও তৃপ্ত। হিসাব-নিকাশ নির্ভুলভাবে পরীক্ষা করা, বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা ইত্যাদি কাজে বিজ্ঞান ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, রোবটের মতো মূল্যবান মেশিন আবিষ্কার করেছে। বলাবাহুল্য বিজ্ঞান আজ তাই শান্তি ও সুরক্ষার কাজে প্রহরীর মতো দন্ডায়মান।
ভাবনায় বিজ্ঞান
আগুন জ্বালাবার মধ্য দিয়েই বিজ্ঞানের যাত্রার সূচনা। এরপর বিজ্ঞান সৃষ্টি করে চলেছে একের পর এক বিস্ময়। দেশের প্রগতির স্বার্থে যখন যা প্রয়োজন তখনই সৃষ্টি হয়েছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার। বিজ্ঞানের অগ্রগতি হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারে ও ভাবনায় আমরা বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারিনি-পুরোপুরি। তার কারণ আমাদের সংস্কারাচ্ছন্নতা। তাই দীর্ঘদিনের সংস্কার ত্যাগ করে আমাদের কর্ম ও চিন্তায় যাতে বিজ্ঞানমনস্ক তথা যুক্তিবাদী হতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। তা করতে পারলে বিজ্ঞানের সুফল সবার কাছে পৌঁছে যেতে পারবে এবং দেশের প্রগতিও সম্ভব হবে।
উপসংহার
বিজ্ঞানের সুফল যেমন আছে তেমনই আছে কুফল। সব জিনিসেরই ভাল-মন্দ থাকবে। তা বলে বিজ্ঞানবিদ্যাকে দায়ী করতে পারি না-তার কুফলের জন্য। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় -“আমরা আমাদের লোভের জন্য যন্ত্রকে দোষ দিই, মাতলামির জন্য শাস্তি দিই তালগাছকে।” মনে হয় এই লোভ ও বিকৃতি থেকে মুক্তি পেতে হলে সহজ সুখের ও সরল সৌন্দর্যের দ্বারস্থ হতে হবে। জীবনের মাধুর্যকে উপেক্ষা করে, প্রেম ভালবাসাকে বাদ দিয়ে যে শক্তিসাধনা তা প্রাণহীন ও যান্ত্রিক হতে বাধ্য। শস্তির কাছে যদি প্রাণের মাধুর্য নির্বাসিত হয়, গলদ যদি আনন্দের চেয়ে বেশি মূল্যবান হয় এবং প্রতাপ যদি প্রেমের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, তবে যন্ত্রসভ্যতার ব্যর্থতা অবধারিত। তাই সেকথা ভেবে আমাদের ভাবনায় ও তাকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানমনস্কতা প্রসারিত করতে হবে। বিজ্ঞানের অসামান্য অবদানের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে নিয়োজিত করতে হবে মানবকল্যাণে।










