প্লাস্টিক দূষণ : সমস্যা ও প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা (উচ্চমাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা)

প্লাস্টিক দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা | প্লাস্টিক দূষণ রচনা
Photo of author
Saheb Roy

Published On:

আজকের পোস্টে প্লাস্টিক দূষণ : সমস্যা ও প্রতিকার বা প্লাস্টিক দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা রচনাটি তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম, যেটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অনেকাংশে সহায়তা করবে। রচনাটি খুব সহজ ভাষায় তোমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এরকম প্রতিনিয়ত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Procesta – প্রচেষ্টা ভিজিট করো।

প্লাস্টিক দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাবৃদ্ধি, অশিক্ষা-দারিদ্র্য, শিল্পায়ন, নগরায়ন, বিশ্বায়ন প্রভৃতি কারণে দুষণ এখন মানুষের নিত্য সঙ্গী। প্রাকৃতিক জল, বায়ু, মাটি এখন এমন দূষিত যে তার অবনমনকে প্রতিরোধ করা দুরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে প্লাস্টিক যেহেতু জৈব পচনবিমুখ দূষিত পদার্থ ও কঠিন বর্জ্য, তাই তা মাটির সঙ্গে মিশে যায় না বা মিলিয়ে যায় না বা রূপান্তরিত হয় না বলেই পরিত্যক্ত সেই বর্জ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে ভয়াবহ দূষণ সৃষ্টি করছে।

প্লাস্টিকের ব্যবহার

বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক একটি সাধারণ নিত্য ব্যবহার্য বস্তু এবং প্রায় সকলেই কোনো না কোনো কাজে ব্যবহার করে থাকে। কেননা এই প্লাস্টিকের সবচেয়ে সুবিধা হল এই যে, ওজনে তা হাল্কা এবং এটি জল এবং বায়ু নিরোধক। ব্যাগ হিসেবে, প্যাকেট হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার আজকাল প্রায় সকলেই করে থাকে। এমনকি বাজার করার সময় জিনিষপত্র নিয়ে আসার জন্য, খাওয়ার নিয়ে যাওয়ার জন্য, জল নিয়ে যাওয়ার জন্য এধরনের নানা কাজে প্লাস্টিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায় জীবনী রচনা

প্লাস্টিক ব্যবহারের সমস্যা

কিন্তু এই প্লাস্টিক যেহেতু ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয় তাই তা গভীর সমস্যার সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয় প্লাস্টিক জৈব পচনবিমুখ দূষিত পদার্থ। তাই তা গলে-পচে যায় না, কিম্বা একে পুড়িয়ে ফেললেও ক্ষতিকারক গ্যাস উৎপন্ন হয়। আবার তা মাটির নীচে গিয়ে মাটিকে দূষিত করে, সমুদ্রে, নদী, নালায় গিয়ে জলকে দূষিত করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তথা বায়ু দূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অথচ নমনীয়তা, দৃঢ়তা প্রভৃতি কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে এবং তার ফলে তা আরো দূষণ সৃষ্টি করছে। জৈব পরিবেশে কার্যকারিতার প্রেক্ষিতে দূষিত পদার্থ দু-ধরনের। (ক) জৈব পচনশীল দূষিত পদার্থ যেমন, জীবজন্তুর দেহ বা দেহাবশেষ। (খ) জৈব পচনবিমুখ দূষিত পদার্থ দূষণজনিত সমস্যা যেমন, পলিথিন প্লাস্টিকের ব্যাগ, চাদর ও আরো অসংখ্য জিনিষ, যা ব্যবহারের পর কঠিন বর্জ্য হিসেবে পরিত্যক্ত হয়, কিন্তু জৈব পদ্ধতিতে পচনশীল নয় বলে সহজে পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। ফলে তা মাটি, জল ও বায়ুকে দূষিত করে সমস্যার সৃষ্টি করে। বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশে ভয়ঙ্কর সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তা পৃথিবীর সমুদ্রগুলিকে গ্রাস করছে। এমনকি প্লাস্টিকের উৎপাদন ক্রমশ এত বাড়ছে যে সেই সমস্যা আরো গভীর আকার ধারণ করছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ফেলে দেবার পর তা আবার মানুষের শরীরে নানাভাবে চলে আসছে। কেননা প্লাস্টিক ভেঙে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যচক্রের মধ্যে প্রবেশ করায় তা সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক থেকে যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সৃষ্টি হয় তা হল ‘বিসফেনল এ’ (Bisphenol A) -যা মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে নিমন্ত্রণ করে আনছে। যেমন, থায়রয়েডের সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব, বিভিন্ন স্ত্রীরোগ, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, স্তন ক্যানসার প্রভৃতি।

আরও পড়ুন:  সত্যজিৎ রায় জীবনী রচনা - Satyajit Ray Biography in Bengali

প্লাস্টিক বর্জ্য

জনসংখা বৃদ্ধি ও সেই বৃদ্ধির কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ায় বর্জ্য হিসেবে প্লাস্টিক সমস্যা সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। এমনকি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বেড়ে যাওয়ায়, মানুষের জীবনচর্যার প্রকৃতির পরিবর্তন হওয়ায় এবং আর্থ-সামাজিক কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য দুধরনের-থার্মো-প্লাস্টিক এবং থার্মোসেট প্লাস্টিক- যা যথাক্রমে ৮০% এবং ২০%। পৌরসভার প্লাস্টিক বর্জ্য সবচেয়ে বেশি এবং সেগুলিকে অপচয় করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ছড়ানো ও বিক্ষিপ্ত বর্জ্যগুলি শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, শহরের নালা-নর্দমা ভরিয়ে তুলছে এবং গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমপূর্ণ স্থানকেও অপরিষ্কার করে তুলছে। সেগুলিকে পোড়াতে গিয়ে বায়ু দূষিত হচ্ছে, শহরে তা পয়ঃপ্রণালী, পুকুর, জমি, জলাভূমিকে ভরিয়ে ফেলে সেগুলিকে বিনষ্ট করছে-যা পরিবেশগত দিক থেকে অস্বাস্থ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করছে।

প্লাস্টিক পুনর্নবীকরণ

প্লাস্টিক যেহেতু বর্তমানে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান তাই এই উপাদানকে পুনর্নবীকরণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এই প্রয়োজন দু দিক থেকে-প্লাস্টিকের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা এবং পরিবেশকে রক্ষা করা। বর্জ্য প্লাস্টিককে ভেঙে ফেলে তার দ্বারা অনেক কিছু তৈরি করা যায়। তবে এই পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া অনেক বেশি জটিল এবং খরচ সাপেক্ষ। অন্তত অন্যান্য কঠিন বর্জ্যের তুলনায়। তবুও ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং ব্যবহারের পর তা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে পুনর্নবীকরণের প্রক্রিয়াতে সাহায্য করা একান্ত কর্তব্য।

প্লাস্টিক দূষণের প্রতিকার

প্লাস্টিকের পুনর্নবীকরণ ছাড়াও আরো অনেক প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, (ক) ৩০ মাইক্রোনের নীচে প্রস্তুত প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ও এক্ষেত্রে অমান্যকারীদের কঠিন শাস্তি প্রদান করা। (খ) যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ফেলে না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে গিয়ে তাকে পুনর্নবীকরণ করতে পারে। (গ) কোনো প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করার পর আবার সেটিকে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া যায় কি না তা দেখতে হবে। (ঘ) দোকানে বা অন্যত্র যথেষ্ট প্লাস্টিক ব্যবহার (ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ক্ষেত্রে) বন্ধ করতে হবে। ক্রেতাকে বলতে হবে আমি প্লাস্টিক চাই না। বিক্রেতাকেও প্লাস্টিকের বদলে কাগজের ঠোঙা, চটের প্রস্তুত সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। (ঙ) সর্বোপরি প্লাস্টিকের ব্যবহার ও তার ক্ষতিকারক দিক সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করা খুব জরুরি।

আরও পড়ুন:  বিজ্ঞানের জয়যাত্রা প্রবন্ধ রচনা Class 10

উপসংহার

সুতরাং প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সকলের সচেতনতা ও তার প্রতিকারে সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে আশু কর্তব্য নির্ধারণ করা একান্ত প্রয়োজনীয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে প্লাস্টিকের দূষণ এ প্রজন্মের মানুষকে ভয়াল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে।

Leave a Comment