সুকুমার রায়ের ‘চিনেপটকা’ গল্পের নাট্যরূপ | Class 12 Bengali Project Golper natorup | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রকল্প গল্পের নাট্যরূপ

Class 12 Bengali Project Golper natorup | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রকল্প গল্পের নাট্যরূপ / সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু বইয়ের চিনেপটকা গল্পের নাট্যরূপ
Photo of author
Aminur Haque

Published On:

আজকে তোমাদের সাথে দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রকল্প  গল্পের নাট্যরূপ সম্পর্কে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ বইয়ের ‘চিনেপটকা’ গল্প অবলম্বনে রচিত একটি নাটক তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম। আশা করছি এই গল্পের নাট্যরূপটি তোমাদের প্রকল্প লিখতে যথেষ্ট সাহায্য করবে

 | চিনেপটকা |

[ সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ বইয়ের ‘চিনেপটকা’ গল্প অবলম্বনে রচিত]

চরিত্র বর্গ :  ক) রামপদ, খ) দাশু, গ) ছাত্র-১, ঘ) পন্ডিত মশাই, ঙ) শিক্ষক-১, চ) শিক্ষক-২, ছ) শিক্ষক-৩, জ) দারোয়ান, ঝ) ছেলের দল

দৃশ্য ১

[ইস্কুলের ক্লাসরুম। দেয়ালে ব্ল্যাকবোর্ড ঝুলছে। তার সামনে মাস্টারমশাইয়ের চেয়ারটেবিল। উলটোদিকে সারি দেওয়া বেন। সেখানে ছেলের দল বসে। মাস্টারমশাইয়ের আসন খালি। ছেলের ল নিজেদের মধ্যে হইচই করছে, খেলা করছে। কেউ কেউ নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে অন্যের জায়গায় দাঁড়িয়ে জটলা করছে। শুধু একটি ছেলে (দাশু) নিজের জায়গায় একলা বসে নিজের মনে ছুরি দিয়ে পেনসিল কাটছে।]

[ একটা বড়ো মাটির হাঁড়ি সুতোয় বেঁধে হাতে ঝুলিয়ে রামপদের প্রবেশ ]

ছেলের দল: এ কী রে রামপদ। হাতে ওটা কী? 

ছাত্র ১: কী ব্যাপার যে রামু। একেবারে হাঁড়ি হাতে?

রামপদ: আজ যে আমার জন্মদিন। তাই মা সকলের জন্য মিহিদানা পাঠিয়ে দিলেন। 

ছেলের দল:  মিহিদানা। কই? কই দেখি।

[ ছেলেদের মধ্যে হইচই লেগে যায়। সবাই রামপদ আর তার হাঁড়িকে ঘিরে ধরে। শুধু দাশু যেমন নিজের মনে পেনসিল কাটিছিল, তেমনই কাটতে থাকে। ]

আরও পড়ুন: মিশর রহস্য গ্রন্থ সমালোচনা প্রকল্প

রামপদ:  দাঁড়া। দাঁড়া। তোদের হুড়োহুড়ির চোটে হাঁড়ি না ভেঙে যায়। একটু সবুর কর। সবাই পাবি। 

[ ছেলের দল হুড়োহুড়ি করতে থাকে। রামপদ সবাইকে হাঁড়ি থেকে মিহিদানা ভাগ করে দিতে থাকে। সবাই মহা আনন্দে খায়। বাদ থাকে শুধু দাশু। সে তখনও আগের মতোই পেনসিল নিয়ে যায়। ]

আরও পড়ুন:  মিশর রহস্য গ্রন্থ সমালোচনা প্রকল্প - Bengali Project

ছাত্র ১: এ কী রে রামপদ। দাশুকে দিবি না। না হয় এর সঙ্গে তোর ঝগড়াই হয়, তা বলে

জন্মদিনের মিষ্টি খাওয়াবি না। এটা ঠিক নয়।

রামপদ: কী রে দাশু? খাবি নাকি। দেখিস, খাবার লোভ হয়ে থাকে তো বল, আর কোনোদিন আমার সঙ্গে লাগতে আসবি না। তাহলে মিহিদানা পাবি।

[ দাশু নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে রামপদর কাছ থেকে গভীর মুখে হাত পেতে মিহিদানা নেয়। তারপর উইংসের ধারে গিয়ে ‘আহ, আহ করে কাকে যেন ডেকে সেগুলো দিয়ে দেয়। ]

ছাত্র ১: ও কী রে দাশু। ওটা কী করলি। 

দাশু: (নির্বিকার মুখে) দারোয়ানের ছাগলটাকে দিয়ে দিলাম। তোরা মিহিদানা খেতে পারিস, আর ছাগল বলে ওর বুঝি মিহিদানা খেতে ইচ্ছে হয় না। (আবার নিজের জায়গায় ফিরে যায়)

রামপদ: (খেপে গিয়ে) দেখলি। দাশুর কাওটা দেখলি। এই জন্য আমি ওকে কিছু… 

ছাত্র ১: ছাড় তো। জানিসই তো, পাগলের কাণ্ড যত। চল, আমরা বরং হাঁড়িটা সাবাড় করে দিই।

[ ছেলের দল আবার হাঁড়ির ওপর হামলে পড়ে। খাওয়া শেষ করে হাঁড়িটা একধারে ফেলে রেখে আবার তারা নিজেদের মধ্যে খেলাগুলো, গল্পগুজব শুরু করে। দামু গুটিগুটি পায়ে সবার অলক্ষ্যে হাতিটার কাছে এসে দাঁড়ায়, তারপর মুচকি হেসে চুপিচুপি হাঁড়িটা নিয়ে দৌড়ে উইংসের বাইরে চলে যায়।]

আরও পড়ুন: Class 12 Bengali Project – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্য সৃষ্ট চরিত্র টেনিদার জীবনী নির্মাণ। 

দৃশ্য ২

[ঘন্টা পড়ার আওয়াজ শোনা যায়। ছেলের দল ছুটে এসে যে যার জায়গায় বসে পড়ে। দৌড়ে মঞ্চে প্রবেশ করে দাশু। তার হাতে সেই হাঁড়ি। ছেলেদের ছোটাছুটির মধ্যে দিয়েই মাস্টারমশাইয়ের জেরিনের নীচে সবার অলক্ষ্যে হাড়িটা রেখেই নিজের জায়গায় এসে বসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই মধ্যে ঢোকেন। পণ্ডিত মশাই। তাঁর পরনে ধুতি পাঞ্জাবি। মাথায় টিকি। হাতে বেত।)

আরও পড়ুন:  নির্বাচিত সাহিত্য সৃষ্ট চরিত্রের জীবনী নির্মাণ প্রকল্প প্রফেসর শঙ্কু | Class 12 Bengali Project

পণ্ডিত মশাই:  (চেয়ারে বসতে বসতে) নদী শব্দের রূপ পড়।

[ ছেলের দল ভাড়াতাড়ি বই খুলে “নদী, নদী, নদয়” আওড়াতে শুরু করে। কিছুটা পড়ার পরই পন্ডিতে মশাই ঢুলতে থাকেন। ছেলেদের পড়ার আওয়াজ কমতে থাকে, তারা চাপা স্বরে গল্প করে, নিজেদের মধ্যে কাটাকুটি খেলে। দাশ একমনে খাতায় কী যেন লিখে চলে। ]

ছাত্র ১: (চাপা স্বরে) কী রে দাশু। চুপচাপ যে। কিছু করেছিস নাকি?

দাশু: (একমনে লিখতে লিখতে) হ্যাঁ, দুটো জি.সি. এম করে ফেলেছি।

ছাত্র ১: ধ্যুৎ। সে কথা কে বলছে। আমি বলছি, কিছু দুষ্টুমির মতলব করিসনি তো? 

[ ঢুলতে ঢুলতে পণ্ডিত মশাইয়ের হাত থেকে বেত খসে পড়ে। তিনি চমকে জেগে ওঠেন। ছেলের দ সঙ্গে সালো আবার জোরে জোরে “নদী, নদী, নদ্যা!” এসবের মাঝে দাশু চুপিচুপি পণ্ডিত মশাইয়ের টেবিলের নীচে ঢুকে কী যেন করে, আবার নিজের জায়গায় এসে শান্ত হয়ে বসে। ছেলের দল হইহল্লা করতে থাকে। হঠাৎ ফট করে একটা পটকা ফাটার শব্দ হয়। যে যেখানে যেমন ছিল সেই অবস্থায় স্থির হয়ে যায়। পণ্ডিত মশাই চমকে জেগে ওঠেন। ]

পণ্ডিত মশাই:  এই। কে রে?

[ হঠাৎ পণ্ডিত মশাইয়ের চেয়ারের নীচ থেকে ফুটফাট, দুমদাম করে পরপর পটকা ফাটার একটানা শব্দে সবাই ভয়ে ছোটাছুটি, চ্যাচামেচি শুরু করে দেয়। পণ্ডিতমশাই আতঙ্কিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠেন। ছেলেদের মধ্যে কেউ কেউ কান্না জুড়ে দেয়। মা জুড়ে হুলুস্থুল কান্ড চলে। উইংসের পাশ থেকে তিনজন শিক্ষক “কী হল? কী হয়!” ]

আরও পড়ুন:  নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্য সৃষ্ট চরিত্র টেনিদার জীবনী নির্মাণ | class 12 bengali project tenida

পণ্ডিত মশাই:  (খুলে যাওয়া ধুতি ঠিক করতে করতে) এই। এসব কী? অ্যাঁ? কী হচ্ছে এখানে। 

দারোয়ান: (পণ্ডিত মশাইয়ের চেয়ারের দিকে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে) দেখব হুজুর। 

পণ্ডিত মশাই : দ্যাখ, দ্যাখ। দ্যাখ তো ওটা কী? ওই যে চেয়ারের নীচে?

[ দারোয়ান একটা বাঁশ দিয়ে চেয়ারের তলা থেকে মিহিদানার হাঁড়িটা টেনে বার করে। ]

দারোয়ান: এ তো মিঠাইয়ের হাঁড়ি আছে। 

পণ্ডিত মশাই:  এটা কোত্থেকে এল? এ কার হাঁড়ি? 

রামপদ: (কাঁচুমাচু মুখে, আমতা আমতা করে)… আরে আমার পণ্ডিত মশাই….. 

[ সঙ্গে সঙ্গে পন্ডিত মশাই রামপদের দুই কান মুলে দেন। ]

পণ্ডিত মশাই:  কী রেখেছিলি হাঁড়িতে?

রামপদ:  আজো… ওর মধ্যে করে মিহিদানা এনেছিলাম। তারপর…. 

পণ্ডিত মশাই:  (এক হাতে তখনও রামপদর কান ধরা) তারপর মিহিদানাগুলো চিনে পটকা হয়ে ফুটাতে লাগল, না?

[ পণ্ডিত মশাই ঠাস ঠাস করে রামপদর দুই গালে দুটো চড় কষান। রামপদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে করে কেঁদে ফেলে। বাকি তিনজন শিক্ষকও রামপদকে চেপে ধরেন। এমন সময় গুটি গুটি পায়ে হলু এগিয়ে আসে। তার হাতে একটা খাতা। ]

দাশু: এই দেখুন, পণ্ডিত মশাই। আপনি যখন ঘুমুচ্ছিলেন, ওরা তখন খাতায় কাটাকুটি খেলছিল। 

[ পণ্ডিত মশাই প্রচণ্ড রেগে কটমট করে তাকান ছেলেদের দিকে। তারপর বাকি তিনজন শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন থতমত খেয়ে যান।

পণ্ডিত মশাই:  (রাগের সঙ্গে দাশুর দিকে ফেরেন) চোপরাও। কে বলেছে আমি ঘুমচ্ছিলাম। 

দাশু: (অবাক হয়ে পণ্ডিত মশাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে) তবে যে আপনার নার ডাকছিল।

পণ্ডিত মশাই : (থতমত হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বটে? ওরা সব কাটাকুটি খেলছিল। আর তুমি। তুমি কী করছিলে?

দাশু:  আজ্ঞে, (কাঁচুমাচু মুখে) আমি পটকায় আগুন দিচ্ছিলাম।

[পর্দা পড়ে যায়।]